রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামে বিল দখলের পর ছয়টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে হামলার শিকার পরিবারগুলোর পুরুষ সদস্যরা বাড়ি ছাড়া। যাদের মধ্যে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারও রয়েছে। পরিবারগুলো আওয়ামী লীগের সমর্থক।
তাদের অভিযোগ, গত ১৬ মে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউপি বিএনপির সভাপতি সফিকুল ইসলাম শাফীর নেতৃত্বে এ হামলা হয়। হামলার সময় তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় তারা ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। থানা বা আদালতে মামলা করতেও সাহস পাচ্ছেন না ভূক্তভোগি পরিবারগুলো। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রক্ষিতপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবুল কাশেম প্রায় ৫০ বছর আগে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে রক্ষিতপাড়া বিলের দুই একর খাস জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। তার মৃত্যুর পর ছেলে মিজানুর রহমান মাছ চাষ চালিয়ে আসছিলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই বিল দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ইউপি চেয়ারম্যান শাফি অনুসারি বিএনপি নেতাকর্মীরা। কয়েক দফায় তারা সেখান থেকে মাছ মারার চেষ্টাও করে। গত ১৬ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম শাফীর নেতৃত্বে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী বিল দখলে যান। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
মিজানুর রহমান রহমান বলেন, ‘‘তাদের হামলায় আমরা টিকতে না পেরে পালিয়ে যান। এরপর শাফী ও তার অনুসারীরা বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। তাদের হামলা থেকে নারী সদস্যরাও রেহাই পাননি।’’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে ছয়টি পরিবারের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাড়ির কাগজপত্র, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, কাপড়-চোপড়, এসি, ফ্রিজ, এমনকি চারটি মোটরসাইকেলও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন আমরা বাড়িতে ফিরতে পারছি না। থানায় যাওয়ার সাহসও পাচ্ছি না।’’
মিজানুর বলেন, আমরা সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করিনা। তবে আওয়ামী লীগের সমর্থক। দলীয় কোন পদেও নেই। তবে বহু বছর ধরেই আমরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাফিকুল ইসলাম শাফী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রক্ষিতপাড়া বিল নিয়ে পূর্বে থেকেই বিরোধ ছিল এবং মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তারা দুইটি শ্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি সেচ দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করে। তখন স্থানীয় লোকজন গিয়ে মেশিন বন্ধ করে দেয়। এ সময় তারা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে।”
বাড়িতে হামলার বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে শাফী আরও বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম জানতে, ফয়সালার আগেই কেন তারা মাছ ধরতে গেল। কিন্তু সেখানে গেলে উল্টো তারা আমার ওপর চড়াও হয়। পরে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। আমি পরে জানতে পারি যে বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়েছে। এভাবে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা ঠিক হয়নি, এমনটি হওয়া উচিত নয়।”
বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
এলাকাবাসীর দাবি, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।