আজ ৩ মে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এ দিনটি আসে প্রতিবছর আমাদের মনে করিয়ে দিতে—যে স্বাধীনতা আমরা দাবি করি, সেটি অনেক সময়ই রয়ে যায় কথার কাগজে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে কেবল সংবাদ প্রকাশের অধিকার নয়, এটি একটি জাতির বিবেক, গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি, আর সাংবাদিকদের নিঃস্বার্থ ত্যাগের স্বীকৃতি।
তবে আজ এই প্রশ্ন উঠবেই—আমরা যারা সত্যের খাতিরে কলম ধরেছি, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই, তারা কি সত্যিই মুক্ত?
পত্রিকার পাতায়, নিউজ পোর্টালের পর্দায় যখন আমরা একটি অন্যায় প্রকাশ করি, তখন হয়তো কেউ একজন নিঃশ্বাস ফেলে বলে—”সত্য এখনো বেঁচে আছে।” কিন্তু আমরা জানি, সেই সত্যের পেছনে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য হুমকি, চাপ, মামলা, ভয়ভীতি আর অনেক সময় প্রাণ হারানোর আশঙ্কা।
একজন সাংবাদিকের জীবন অনেকটা যুদ্ধের মতো। সকালের কাগজে শিরোনাম তুলে ধরার আগে কত রাত কাটে তথ্য জোগাড়ে, কত ঘন্টা পার হয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়, কতদিন পরিবার থেকেও দূরে থাকতে হয়, তবু সমাজ জানে না সেই কষ্ট। আমরা যখন মাঠে থাকি, তখন পকেটে প্রেস কার্ড থাকলেও বুকের ভিতর থাকে সন্তানদের মুখ, প্রিয়জনের অপেক্ষা, আর একটাই আকাঙ্ক্ষা—সত্য যেন থেমে না যায়।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে কেবল সরকারের সমালোচনা নয়, বরং জনগণের পাশে দাঁড়ানো, নির্যাতিতের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠা। অথচ এই কলমকে থামাতে চায় কত হাত, কত নিঃশব্দ ষড়যন্ত্র।
আজকের এই দিনে, আমরা সাংবাদিকেরা চাই না শুধু ফুলের তোড়া কিংবা শুভেচ্ছা। আমরা চাই মর্যাদা, নিরাপত্তা, ও স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ। চাই যেন আর কোনো কলম থেমে না যায় হুমকির ভয়ে, আর কোনো সাংবাদিক লাশ হয়ে না ফেরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে।
এই দিন হোক আমাদের চোখে চোখ রেখে প্রতিজ্ঞা করার দিন—গণমাধ্যমকে মুক্ত রাখতে হলে, আগে সাংবাদিককে মুক্ত করতে হবে। কারণ আমরা কেবল সংবাদ লিখি না, আমরা ইতিহাস গড়ি।