রাজশাহী—যে শহর এক সময় তার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শান্ত পরিবেশের জন্য পরিচিত ছিল—সেই নগরী আজ জুয়া ও মাদক নামক দুটি মরণছোবলের থাবায় আক্রান্ত। এক অদৃশ্য আগ্রাসনে নিঃশব্দে গিলে খাচ্ছে এই অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজ, পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।
নগরীর অলিগলি, আবাসিক এলাকার ফাঁকা ফ্ল্যাট, কিছু চায়ের দোকান এমনকি কিছু তথাকথিত ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের আড়ালেও চলছে জুয়ার আসর ও মাদক সেবনের মহোৎসব। প্রতিনিয়ত তরুণদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে এই জালে, আর সেই জাল বুনছে এমন এক চক্র, যাদের শিকড় প্রশাসনের অগোচরে ভয়াবহভাবে বিস্তৃত।
এই জুয়া ও মাদকের যোগান দিতে গিয়ে নগরীতে বাড়ছে ছিনতাই, চুরি, খুন, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধ। অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়ছে পরিবার, সমাজে বাড়ছে অবিশ্বাস, অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা। মাদকে আসক্ত হয়ে অনেক তরুণ আজ হয়ে উঠছে অপরাধী, কিংবা হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের দিশাহীন গন্তব্যে।
প্রশ্ন হচ্ছে—এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন কতটা প্রস্তুত? কোথায় নিয়মিত গোয়েন্দা তৎপরতা? কোথায় ধারাবাহিক অভিযান? অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন হচ্ছে কি? কিছু লোক দেখানো তৎপরতা দিয়ে এই ভয়াবহ ব্যাধিকে রোখা যাবে না। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কঠোরতা এবং সামাজিক প্রতিরোধের সম্মিলিত উদ্যোগ।
জুয়া ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এখন সময়ের দাবি। শুধু আইন প্রয়োগ করলেই হবে না, প্রয়োজন সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা সৃষ্টি করা। পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—সর্বত্র এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে যে, আমরা আর চুপ থাকব না।
আমরা অপরাধের সঙ্গে আপস করব না।
আমরা আমাদের সন্তানদের হারাতে চাই না।
রাজশাহী মহানগরী আজ একটি ভয়াবহ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমরা কি এই নগরীকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেব, নাকি একসাথে জেগে উঠে রুখে দাঁড়াব?
পরিশেষে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান—অনুগ্রহ করে চোখ বন্ধ রাখবেন না। সময় এখন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। দেরি হলে, আমাদের হাত থেকে ফসকে যাবে একটি প্রজন্ম, একটি শহর, একটি জাতির ভবিষ্যৎ।
লেখক : মোঃ নুরে ইসলাম মিলন
সভাপতি
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী বিভাগ।