রাজশাহীর তানোরে ১৪ বছর ধরে জাল সনদে শিক্ষকতার চাকুরি করছেন মহসিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউপির কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন মানুষ গড়ার কারিগরের এমন জালিয়াতির খবর ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষক সমাজে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থাসহ বিভাগীয় মামলার দাবি তুলেছেন শিক্ষক সমাজ। তথ্যানুুসন্ধানে জানা যায়, বিগত সরকারের সময় তানোর উপজেলার কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান মহসীন আলী। তিনি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে যোগদান করেন। তার ইনডেঙ্ নম্বর ১০৪২২১৭৮। নিবন্ধন ২০০৮, রেজি নম্বর ১২২১১০৬৬৭, রোল নম্বর ৮০০০৬৩৮৪। শিক্ষক মহসীনের নিবন্ধনটি জাল বা অন্য শিক্ষকের বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি কামারগাঁ শ্রীখণ্ডা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার বাড়ি রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায়। তিনি ২২ হাজার ৯২৩ টাকার বেতন পান। যোগদান থেকে তার চাকুরির বয়স ১৫ বছর। বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬ টাকা বেতন ভাতা পেয়েছেন। সেই হিসেবে ১৫ বছরে প্রায় ৪১ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ টাকা বেতন পেয়েছেন এই জালিয়াত শিক্ষক। অর্থাৎ সরকারি কোষাগার থেকে এতো পরিমান টাকা লোপাট করেছেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, মহসীনের মতো যাতে করে আর কোন শিক্ষক জালিয়াতি করে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় লিপ্ত না হতে পারে। কারণ জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি নিলে তার দ্বারা জাল শিক্ষার্থী তৈরি হবে। তার জালিয়াতির বিষয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার সবকিছু জানার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তিনি। সুতরাং প্রধান শিক্ষকও দায় থেকে এড়াতে পারেন না। তাকেও আইনের আওতায় আনার দাবি ওই স্কুলের শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলের। অবশ্য দুজনেই বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পেয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। ওই স্কুলের শিক্ষকসহ স্থানীয়রা জানান, একজন শিক্ষক জেনে বুঝে জাল সনদ দিয়ে চাকুরি নিয়ে ১৫টি বছর আরাম আয়েশ চাকুরি করছেন। তার জাল সনদের ঘটনায় গত বছরের ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসের দিকে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষক আর জাল শিক্ষকসহ ওই সময়ের ক্ষমতা ধরেরা টাকার বিনিময়ে তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছে। তদন্তের এতোদিন হতে চললেও বহাল তবিয়তে আছেন মহসীন। তার সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতসহ বিভাগীয় মামলার দাবি তুলেছেন শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবক মহল। কারণ দেশে সকল বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করছেন। তার ধারাবাহিকতায় মহসীনদের মত শিক্ষকদের বাকি সময় শ্রীঘরে থাকায় শ্রেয়। তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। শুধু মহসীন নয়, ওই সময়ের প্রধান শিক্ষক ও বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বর্তমান প্রধান শিক্ষকসহ ওই সময়ের কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে। শুধু বেতন ফেরত নিয়ে যেন এই জালিয়াতি ধামাচাপা দেয়া না হয়। এবিষয়ে শিক্ষক মহসীন মোবাইলে বলেন, গত ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। ওই টিম যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আমি সেটা মেনে নিব। এর বেশি কোন কথা বলতে পারব না বলে দাম্ভিকতা দেখান তিনি। প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমারও একই ধরনের কথা বলে এড়িয়ে গেছেন। এব্যাপারে তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঘটনাটি তদন্ত টিম দেখবেন। তারপরও অভিযোগ ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে তিনি এড়িয়ে গেছেন।