বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা খাত। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটির ১৮টি বিভাগের প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী একে অপরের পরিপূরক হলেও, বাস্তবে পরস্পরের প্রতি নেই সহনশীলতা বা সহযোগিতা। মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের স্বাভাবিক দাপ্তরিক কাজেও ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফাইল নড়াতে হলে লাগছে ঘুষ—এ যেন রেলওয়ের অলিখিত নিয়ম। টিএ বিল, প্রমোশন, বদলি, ছুটি, ফাইনাল সেটেলমেন্ট, পেনশন, এমনকি আবাসন বরাদ্দ কিংবা বদলিতেও দিতে হচ্ছে ঘুষ। অথচ এসব কাজের জন্যই তো তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ‘চুক্তির টাকা’ ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়।
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অনেকেই মনে করেন, এটি অমানবিক আচরণের সামিল। একে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকা সত্ত্বেও, এই ঘুষ-সংস্কৃতি রেল ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।
আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, অস্থায়ী শ্রমিকের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীদের যোগসাজশে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা শোষণ মেনে নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও, রেল ভবন পর্যন্ত দুর্নীতির স্রোত থেমে নেই। মাঠপর্যায়ে ছোটখাটো টেন্ডার, তেল, টিএ, কমিশন, কালোবাজারি থেকে শুরু করে রেল ভবনে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, অস্বচ্ছ কেনাকাটা, অনিয়মিত চুক্তি, কমিশন বাণিজ্য, পার্সেন্টেজ ভাগাভাগি—সব কিছুতেই দুর্নীতির জাল বিস্তৃত।
প্রশ্ন জাগে, এমন একটি ব্যবস্থায় কীভাবে সেবা পাবে সাধারণ যাত্রীরা? কীভাবে ফিরবে স্বচ্ছতা? এবং সবশেষে, কবে রেলওয়ে হবে প্রকৃত অর্থে জনগণের প্রতিষ্ঠান?