জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসায় সাংবিধানিক বিধি মেনে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছে সিঙ্গাপুর। দেশটির প্রেসিডেন্ট থারমান শানমুগারত্মম প্রধানমন্ত্রী লরেন্স উওংয়ের সঙ্গে পরামর্শের পর সোমবার পার্লমেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আগামী তিন মাসের মধ্যে দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে ১৯৬৫ সাল থেকে ক্ষমতায় আছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি (প্যাপ)। অর্থাৎ ১৯৬৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত হওয়া প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে প্যাপ। ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং সামনে কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অনুপস্থিতিই এই সাফল্যের রহস্য।
দলটি কত ব্যবধানে জিতবে— সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হলেও বিগত নির্বাচনের তুলনায় সেবার প্যাপের ফলাফল বেশ নেতিবাচক ছিল।
তাছড়া গত প্রায় ১ যুগ ধরে ধীর গতিতে হলেও সিঙ্গাপুরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ১০টি আসন জিতেছিল বিরোধীরা যা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি রেকর্ড। এর আগে কখনও কোনো নির্বাচনে আসন জয়ের ক্ষেত্রে দু’অঙ্ক ছুঁতে পারেনি বিরোধীরা।
তাছাড়া এবারের নির্বাচন সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লরেন্স উওংয়ের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। কারণ, ২০২৪ সালের মে মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং পদত্যাগ করার পর এতদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার চালাচ্ছিলেন লরেন্স।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ক্ষুদ্র, বাণিজ্য-নির্ভর সিঙ্গাপুরের দ্রুত সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়াকে সমর্থনকারী বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে।
ট্রাম্প কয়েক ডজন দেশের ওপর ব্যাপক শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত এবং চীনের সাথে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ট্রান্সশিপমেন্ট হাব সিঙ্গাপুর নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
সোমবার, সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের জন্য তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১-৩ শতাংশ থেকে শূন্য থেকে ২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে এনেছে।
গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে এক কঠোর সতর্কবার্তায় প্রধানমন্ত্রী ওং ঘোষণা করেছেন, ‘নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্বায়ন এবং মুক্ত বাণিজ্যের যুগ শেষ।’
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের চাপা দেওয়া প্রান্তিককরণ এবং পিছনে ফেলে দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
৫২ বছর বয়সী ওং উত্তাল জলরাশির মধ্য দিয়ে দেশকে পরিচালনা করার জন্য একটি দৃঢ় ম্যান্ডেট চাইছেন।