April 22, 2025, 12:26 am
শিরোনাম :
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি ও শ্রম আইনকে ‘সার্বজনীন’ করার সুপারিশ প্রশাসন বিএনপির নিয়ন্ত্রণে— ‘অভিযোগকারী কি উপদেষ্টা থাকাকালে তাদের বসিয়েছেন?’ স্বর্ণের ভরি ছাড়ালো ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা হৃদয়কে খেলাতে ডিপিএলের নিয়মই বদলে ফেললো বিসিবি! পুঠিয়ায় আ’গুনে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই, ৫ লক্ষ টাকা ক্ষয়ক্ষতি কাতারের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলা, ২৩ শিক্ষককে অব্যাহতি সমাজ থেকে বিভেদ দূর করতে একসাথে কাজ করার আহ্বান’ পারভেজ হত্যায় গ্রেফতার ৩ জনের ৭ দিনের রিমান্ড

পুকুরে জাল দিলেই মরছে মাছ, মাথায় হাত রাজশাহীর শত শত চাষির

স্টাপ রিপোর্টার :
পুকুরে জাল দিলেই মরছে মাছ, মাথায় হাত রাজশাহীর শত শত চাষির

দেশের বাজারে তাজা মাছের জন্য বিখ্যাত এখন রাজশাহী। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্প জাতীয় যেসব তাজা মাছ বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই যায় রাজশাহী থেকে। ট্রাকে করে বিশেষ কায়দায় এসব মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন বাজারের আড়তগুলো পাঠান রাজশাহীর চাষিরা। এর পর আড়ত থেকে সেই মাছ কিনে খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাতের মাঝে বিক্রি করেন। পুকুরে মাছ চাষ কারে এভাবে বাজারজাত করে রাজশাহীর শত শত বেকার যুবক এখন স্বালম্বি হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন কোটিপতি। তবে এ বছর অনেক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত পড়েছে মাছের অজানা এক ধরনের ভাইরাসের কারণে। অধিকাংশ পুকুরে শীতের পরে মাছ ধরার জন্য বা দেখার জন্য জাল দিলেই মাছ মরতে শুরু করেছে। আর সেই মরা যেন থামানো যাচ্ছে না।

চাষীরা জানান, চুন লবনসহ একের পর জীবানুনাশক, এন্টিবায়েটিক ও নানা ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও মাছ মরা রোধ হচ্ছে না। পুকুর থেকে ৭-১০ দিনের মধ্যেই লাখ লাখ টাকার মাছ মরে যাচ্ছে। সকালে পচা মাছ ভেসে উঠছে। এতে রাজশাহীর শত শত মাছচাষির মাথায় হাত পড়েছে। অনেক চাষি বেকায়দায় পড়েছেন। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর এখন এসব নিয়ে কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন মাছ চাষিরা।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের বর্দ্ধনপুর বিলে মাছ চাষ করেন আব্দুল মান্নান। তিনি জানান, এবার শীত মৌসুমের পরে মাস খানেক আগে তাঁর একটি পুকুরে মাছ ধরার জন্য জাল দেন। দুই ট্রাক মাছ ধরার চার-পাঁচ দিন পর থেকে ওই পুকুরে মাছ মরে সকালে ভাসতে শুরু করে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন ৫-৭টা করে মাছ মরছিল।

কয়েকদিনের মাথায় সেটি প্রতিদিন ৩০-৫০টা করে বাড়তে শুরু করলো। মাছ মরা রোধে চুন-লবন, ভিটামিন সি ছিটানোসহ একের পর এক এন্টিবায়েটিক ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি। কয়েদিন মাথায় পুকুরের অন্তত অর্ধেক মাছ মরে যায়। বাধ্য হয়ে আবারো জাল দিয়ে সব মাছ তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তবে তার আগে অন্তত ৩ লাখ টাকার মাছ তার পুকুর থেকে মরে পচে গেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

দুর্গাপুরের মাড়িয়া বিলে মাছ চাষ করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনিও দাবি করেন, এবার শীতের পরে তার পুকুওে জাল দেওয়ার পর থেকে শত শত মাছ মরে গেছে। নানা ধরনের পরিচর্যা কর্ওে সহজে মাছ মরা থামাতে পারেননি তিনি। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কিনতেই তার প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে মাছ মরা থামাতে গিয়ে। এর পরও কমপক্ষে চার লাখ টাকার মাছ মরে গেছে। এতে অনেকটায় বেকায়দায় পড়েছেন তিনি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এমনিতেই মাছ চাষে খরচ বেড়েছে। এর ওপর হঠাৎ করে এবছর মাছ মরে যাওয়ায় অনেকটা ক্ষতিরমুখে পড়েছি। পুকুর জাল দেওয়ার পরে এবার যেভাবে মাছ মরেছে, এর আগে কখনো এভাবে মাছ মরতে দেখিনি। কি ভাইরাস ধরছে কেউ বলতেও পারছে না। কিন্তু মাছ মরা থামানো যাচ্ছে না। এখনো মরছেই। দুই-একটা করে।’

গোদাগাড়ীর কমলাপুর বিলের মাছ চাষি মাইনুল ইসলাম বলেন, এবার শীতের পরে পুকুলে জাল দিয়ে আমার অন্তত দুই লাখ টাকার মাছ গেছে। এভাবে আমাদের বিলে অন্তত ৪০টি পুকুরে মাছ মরেছে। এখনো মরছে। কিন্তু মৎস্য অফিস থেকে কোনো কার্যকর ভূমিকা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। চাষিরা বিভিন্ন কোম্পানীর মাছের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেও পরামর্শ মতে অথবরা চাষিরা নিজেই নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে মাছ মরা রোধে পরিচর্যা করছেন। তার পরে আমাদের বিলেই এখন পর্যন্ত অন্তত অর্ধ কোটি টাকার মাছ মরে গেছে অজানা ভাইরাসে। এতে করে আমাদেও যেন মাথায় হাত পড়েছে। অনেক চাষি আর্থিক সঙ্কটের কারণে পুকুরে এখন নতুন করে মাছের পোনাও দিতে পারছেন না।’

মোহনপুরের মাছচাষি লিটন সরকার বলেন, ‘শীতের পরেই সাধারণত আমরা পুরনো মাছ ধরে নতুন করে পুকরে মাছ সেট করি। আবার অনেক পুকুরে শুধু মাছ দেখার জন্যেও জাল দেয়। এবারও তাই করেছি। কিন্তু শীতের পরে এবার জাল দিলেই অধিকাংশ পুকুরের মাছে ভাইরাস ধরেছে। মাছের পেটের নিচে বা শরীরে লাল দাগ দিচ্ছে। আবার কোনো কোনো মাছের নাভি ফুলে থাকছে। মাছ মরতে শুরু করলে কোনোকিছুতেই লাভ হচ্ছে না। মৎস্য অধিদপ্তর থেকেও এ নিয়ে কোনো ভূমিকা দেখা দেয়নি এখন পর্যন্ত। বাধ্য হয়ে চাষিরা পুরনো মাছ সব বিক্রি করে দিচ্ছেন।’

রাজশাহীর মাছচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এভাবে জেলার বাগমারা, পবা, তানোর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘাতেও শত শত পুকুরে মাছ মরে গেছে অজানা ভাইরাসে।

তবে ভাইরাসে মাছ মরার কোনো খবর রাজশাহীর মৎস্য অধিপ্তরে নাই বলে জানিয়েছেন সদ্য অবসরে যাওয়া বিভাগীয় উপপরিচালক আব্দুল ওহাব। গত ২৭ মার্চ তিনি অবসরে যান। কিন্তু এখন খরার কারণে পুকুরগুলোতে পানির অভাব দেখা দেওয়ায় অক্সিজেন সঙ্কটের কারণে মাছ মরতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। এর জন্য পুকুরে পানি সেচের ব্যবস্থাও করতে বলেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com