চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের পারদিলালপুর গ্রামে ২০১৫ সালের একটি হত্যা মামলার সাক্ষী দেয়ার জের ধরে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ লোকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে সেতাউর রহমান নামে একজন ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। সেতাউর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মোঃ আয়নাল হকের ছেলে।
গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) জুম্মার নামাজের খুৎবায় পারদিলালপুর নুর জামে মসজিদের খতিব ভুক্তভোগী মাওলানা আব্দুল করিম শাহিন (৩০) অসহায়ত্ব প্রকাশ করে মুসল্লীদের উদ্দেশ্য এ অভিযোগ করেন।
তিনি জানান, গত ২০১৫ সালের একটি হত্যা মামলায় আমার আব্বা সাক্ষী দিলে একই এলাকার আয়নাল হক (৬৫), তার দুই পুত্র আরিফুল ইসলাম (৪৫), সেতাউর রহমান (৩৩) ও ভাতিজা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সোর্স এসরাইল হক (আকডুম) (২৫) আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে।
এই বিরোধের জের ধরে তারা আমার আব্বা আফসার আলী (৬৫) ও পার্শ্ববর্তী মোঃ আব্দুস সালাম (৬৮) ও আবুল কালাম আজাদ (৪০) সহ ৩টি পরিবারের মোট ৭ জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ ও সদর মডেল থানায় গুম, অপহরণ, চুরি, চাঁদাবাজি ও সর্বশেষ সম্প্রতি আমের আড়ৎ পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে মোট ৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর-২০২৪ ইং শিবগঞ্জ থানায় আমার আব্বা আফসার আলী ও পুলিশ সদস্য সহ ১২ জনকে আসামি করে ১ম মামলাটি দায়ের করে বাদি আয়নাল হক। ওই মামলায় আমার আব্বা আদালত কর্তৃক জামিনে মুক্ত হয়ে কারাগার থেকে বের হওয়া মাত্র ১৮ ডিসেম্বর-২০২৪ ইং জেল গেট থেকে আটক করে শিবগঞ্জ থানার এসআই পিয়ারুল। আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমার আব্বাকে টেনেহিঁচড়ে পিক-আপে উঠিয়ে সদর মডেল থানায় নিয়ে যায়। আমি পাগলের মতো ছুটোছুটি করে সদর মডেল থানায় গিয়ে শুনতে পায় আমার অসুস্থ আব্বা মার খাওয়ার ভয়ে দিশেহারা হয়ে কোথায় চলে গেছেন। আব্বাকে হারিয়ে আমি কাঁদতে কাদঁতে বাড়ি আসলে আবার পুলিশ বাড়িতে এসে হাজির করার জন্য আমার আম্মা সহ পরিবারের সবাইকে ভয়ভীতি দেখায়। আমার আব্বা, আমি সহ আমার পরিবারের কেউ রাজনীতি করিনা বলেও জানান মাওলানা আঃ করিম শাহিন।
অপর আসামিরা হলো, একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, আব্দুস সালাম, ইমতিয়াজ সহ আরো কয়েকজন। তারা একাধিক মামলার ভয়ে ও নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। আসামিরা সবাই দরিদ্র। থানা-পুলিশ ও ছাত্রদল নেতা সেতাউরের ভয়ে তাঁরা স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারছেন না।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর পার্কে বিএনপির জনসভা চলাকালে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়, প্রতিপক্ষের আঘাতে আহত হয় সেতাউর রহমান। এই ঘটনায় আফসার আলী, আব্দুস সালাম সহ এরা জড়িত না থাকলেও তাদের আসামি করে আবারও মিথ্যা মামলা করে সেতাউর।
এবং সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ-২০২৫ ইং শিবগঞ্জ উপজেলার ধোবড়া বাজারে আরিফুল ইসলামের একটি আমের আড়ৎ অজ্ঞাতভাবে আগুনে পুড়ে যায়। কে বা কারা ও কিভাবে আগুনে আমের আড়ৎটি পুড়েছে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকলেও আব্দুস সালাম, আফসার আলী, আবুল কালাম আজাদ, ইমতিয়াজ ও নুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহিন সহ ৭ জনকে আসামি করে পরিকল্পিত ভাবে ফের মামলা করে আয়নাল হকের আরেক পুত্র আরিফুল ইসলাম।
স্থানীয় নুর জামে মসজিদের বয়স্ক একজন মুসল্লী মোঃ বিশারত আলী বলেন, আফসার আলী, আব্দুস সালাম সহ এই নুর জামে মসজিদের খতিবের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা মামলা করেছে আয়নাল ও তার দুই পুত্র সেতাউর ও আরিফুল। যা আক্রোশ মূলকভাবে মামলা করেছে, আমাদের জানা মতে তারা জড়িত হতে পারেনা।
একই এলাকার জামায়াত নেতা মোঃ সামসুল হোদা (হান্টু) জানান, আয়নাল হক তার দুই ছেলে সেতাউর ও আরিফুল বিএনপির নাম ভাংগিয়ে ক্ষমতার দাপটে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে সালাম, আফসার, আবুল কালাম আজাদ, নুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহিন সহ নিরীহ লোককে হয়রানি করছে। তারা মামলার ভয় ভীতি দেখিয়ে অনেকের নিকট চাঁদা দাবি করার অভিযোগ করেন।
সদ্য ভস্মীভূত আরিফুল হকের আমের আড়ৎ এর জায়গার মালিক মোঃ বাবুল ইসলাম মাষ্টার বলেন, গত ২৭ মার্চ আমার জমিতে আড়ৎটি ছিলো, সেটি দিনের বেলায় সকাল সাড়ে ১০টার সময় কিভাবে কিংবা কে পুড়িয়েছে আমরা জানিনা। আরিফুল ইসলাম নুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহিন সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে যে মামলা দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আড়ৎ এ ১৬ লাখ টাকার মালামাল দুরের কথা এক লাখ টাকার মালামাল ছিলোনা। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের নিকট এবিষয়ে সত্যতা জানতে বলেন। তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে আরও বলেন আমার জমিতে আড়ৎ অথচ আমার বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দিলে আমাকে আসামি করে জেলখানায় ঢুকানোর হুমকি দিচ্ছে আরিফুল ও সেতাউর।
স্থানীয়রা জানান, পারদিলালপুর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহিনের বিরুদ্ধে মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা। হুজুর খুব ভালো মানুষ। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ও কিছু লোকের প্ররোচনায় বাদী সেতাউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে শাহিন হুজুর সহ এসব নিরীহ লোককে হয়রানি করছে। তারা আরো বলেন, আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার অন্যতম আসামী মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় সন্ত্রাস আইনে মামলা রয়েছে। তারা দুইজন আয়নাল হকের পুত্র ও সেতাউর রহমানের ভাই। তাদের বিরুদ্ধে জেএমবি’র জঙ্গীদের অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ আছে।
এ ব্যাপারে মন্তব্যর জন্য মামলার বাদী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সেতাউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সঠিক মামলা করেছি। আসামিরা আমাদের পরিবারের অনেক ক্ষতি করেছে। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া জাকা বলেন, আমাদের এক নেতার সাহসে ও ইন্দনে পুলিশকে প্রভাবিত করে এধরণের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সেতাউর রহমান। এসকল অপকর্মের সত্যতা পাওয়া গেলে দলের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী শক্তভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারী পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মোঃ ইয়াসির আরাফাত মুঠোফোনে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্ত করছে। নথিপত্র দেখে তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এমূহুর্তে মামলার বিস্তারিত নথিপত্র না দেখে এর বেশি মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে কোনো নিরিহ মানুষ যেন হয়রানি না হয়, সে বিষয়টি দেখবো।