July 13, 2025, 10:44 am
শিরোনাম :
“সাবেক দূতাবাস কর্মকর্তা লেদার অস্বচ্ছ দৌরাত্ম্যে উত্তাল রাজশাহী”-শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ অসুস্থ ফরিদা পারভীনের খোঁজ নিলেন বেগম খালেদা জিয়া তানোরে মুরগির বিষ্ঠা ফেলার সময় গ্রামবাসীর হাতে ২টি ড্রাম ট্রাক আটক জামিনে মুক্তি পেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই বিএনপি নেত্রী বাঘায় খেয়া ঘাটে গভীর রাতে গুলি ছুড়ে স্পিডবোট ভাঙচুর, ইঞ্জিন খুলে নেয়ার অভিযোগ রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত রাবি উপাচার্যের সঙ্গে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতির সাক্ষাৎ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত মন্ডুমালায় জমি দখল কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা ‘আমাদের গল্প এখন বিশ্বজুড়ে শোনা যাচ্ছে’

রাজশাহীতে এআই টেকনিশিয়ানদের ৭ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার :
রাজশাহীতে এআই টেকনিশিয়ানদের ৭ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন

রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের সামনে বুধবার (৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ছিল অন্যরকম এক প্রতিবাদের দিন। মাঠপর্যায়ে নিরলস সেবা দেওয়া এআই (কৃত্রিম প্রজনন) টেকনিশিয়ানরা এদিন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন—শুধু নিজেদের নয়, গোটা প্রাণিসম্পদ খাতের স্বীকৃতি ও ন্যায্যতার দাবিতে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ এআই টেকনিশিয়ান কল্যাণ সমিতির বৃহত্তর রাজশাহী জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নেন রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শতাধিক টেকনিশিয়ান। তাদের দাবি—বকেয়া সম্মানী ভাতা পরিশোধ, চাকরি স্থায়ীকরণ, ন্যায্য সম্মানী নির্ধারণসহ সাত দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।

জোরালো যে কণ্ঠগুলো শোনা যাচ্ছিল স্লোগান। সেগুলো হলো- “মৌখিক আশ্বাস আর নয়, বাস্তবায়ন ছাড়া আপোষ নয়।” “সিমেনের মূল্য কমাতে হবে, সিমেনের লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাহার করতে হবে।”“ক্ষুধা পেটে সেবা নয়, অধিকার চাই—ভিক্ষা নয়।” “প্রাণিসম্পদে বৈষম্য কেন? প্রশাসন জবাব চাই।” “দুধ-মাংস উৎপাদনে এআই টেকনিশিয়ানদের অবদান সবার উপরে।”

এই স্লোগানগুলো শুধু প্রতিবাদের ভাষা নয়, তারা যেন এক একটি জীবনের বাস্তবতা। মাঠের পর মাঠ পাড়ি দেওয়া এই কর্মীরা দাবি করছেন, আর চুপ করে থাকবেন না।

মাহবুব হোসেন, বাগমারার এক অভিজ্ঞ এআই টেকনিশিয়ান। ১২ বছর ধরে কাজ করছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। “প্রতিদিন ভোরে বাড়ি থেকে বের হই, গরুর প্রজনন করি, অসুস্থ পশুকে চিকিৎসা দিই। কিন্তু মাস শেষে সম্মানী না পেয়ে দোকানে বাকির খাতা বাড়ে,”—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন তিনি।

এই পেশায় থেকে এত বছরেও চাকরি স্থায়ী হয়নি, নেই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, এমনকি চিকিৎসার খরচ বা অবসরকালীন কোনো সুযোগও নেই।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ এআই টেকনিশিয়ান কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে যে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে, তা হলো— বকেয়া সম্মানী ভাতা দ্রুত পরিশোধ, চাকরি স্থায়ীকরণ, ন্যায্য ও নির্দিষ্ট মাসিক সম্মানী নির্ধারণ, সরকারি স্বীকৃতি প্রদান, অবসরে গেলে পেনশন সুবিধা, পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের সরবরাহ, পেশাগত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, “এই দাবিগুলো কোনো বিলাসিতা নয়, সবই আমাদের ন্যায্য অধিকার। প্রতিনিয়ত মাঠে কাজ করেও সম্মানী পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়—এটা আর চলতে দেওয়া যায় না।”

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন—বৃহত্তর রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব, নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মোস্তাক হোসেন, অর্থ সম্পাদক ইসাহাক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক কবিরুল, নাটোর জেলা শাখার সভাপতি এসএম কায়কোবাদ। আরও ছিলেন আলহাজ্ব আমিরুল ইসলাম বাবু, গোলাম রাব্বানী, হিমেল, মমিন ও সাবদুল।

তারা একে একে নিজেদের বক্তব্য দেন এবং বলেন, “দাবি মানা না হলে রাজপথেই আন্দোলন আরও তীব্র হবে।”

এই কর্মবিরতির প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। খামারিরা চিন্তিত, কারণ গবাদিপশুর প্রজনন বা চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয় এই টেকনিশিয়ানদের উপর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের খামারি রহিম বলেন, “আমার গাভী গতকাল হিটে উঠেছিল, আজ ইনজেকশন দেওয়ার কথা ছিল। এখন ফোন করলে বলে—কাজ বন্ধ। এটা তো খামারির জন্য বড় ক্ষতির ব্যাপার।”

এআই টেকনিশিয়ানদের অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। “প্রতিবার আশ্বাস আসে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। এবার আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে,”—বলছিলেন নাটোর জেলা সভাপতি কায়কোবাদ।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রাজশাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি কেন্দ্রীয় দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে লিখিত বা সরাসরি আলোচনার কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়।

এই পেশায় থাকা অধিকাংশ টেকনিশিয়ানই বেসরকারিভাবে নিয়োজিত, কিন্তু সরকারি প্রকল্পের অংশ। তাদের জীবনে না আছে নিশ্চয়তা, না আছে স্বীকৃতি। অথচ দেশের দুধ-মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাদের ভূমিকা সরাসরি।

রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ের সামনেই ছিল এই মানববন্ধন। কিন্তু ভিতরে বসে থাকা কর্তৃপক্ষ কী আদৌ শুনেছে তাদের আক্ষেপের কথা? নাকি এই কণ্ঠগুলো আবারও থেমে যাবে আশ্বাসের ভোঁতায়?

সময়ের কন্ঠস্বরের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় রাজশাহী জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. মো. সোহেল আলম খানের সাথে। তিনি জানান, এটা একটি জাতীয় ইস্যু। এই বিষয় নিয়ে আন্দোলনকারীরা কর্তৃপক্ষের সাথে বসেছিলেন। আলোচনা চলছে।

দাবিগুলো যদি বাস্তবায়ন না হয়, তবে শুধু টেকনিশিয়ানরাই নয়—ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত, খামারিরা এবং সার্বিকভাবে জনগণ। যারা মাঠে ঘাম ঝরায়, তাদের বঞ্চনা কোনো উন্নয়নের অংশ হতে পারে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ