April 18, 2025, 12:23 am

রাজশাহী মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার :
রাজশাহী মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। দিন দিন বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। দিন-রাত বলে কোনো সময় নেই। মশার উপদ্রব থেকে কবে বা কতটুকু রেহাই মিলবে নাকি আদৌ রেহাই মিলবে না সেই দুঃশ্চিতায় নগরবাসীর। নগরবাসী বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা না থাকার কারণে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আর সিটি করপোরেশন বলছে, এখন প্রজনন মৌসুম বলে মশার উৎপাত বেড়েছে। তবে অন্য শহরের তুলনায় এখানে মশা কম।
রাজশাহী নগরজুড়ে ফেব্রুয়ারি থেকে মশার উৎপাত বেড়ে গেছে। এ সময় মশার প্রজননের সময়। তাই সর্বত্রই মশার বিচরণ।
সন্ধ্যার পর এই উৎপাত আরও বেড়ে যায়। মশার জন্য বাইরে বসা যায় না। ঘরেও থাকা যায় না। এ পরিস্থিতিতে মশার কয়েল, অ্যারোসলসহ বিভিন্ন উপায়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ।
বিশেষ করে ইফতারি ও সেহরির সময় মানুষ মশার জ্বালায় ভোগান্তিতে পড়ছেন। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ছাড়াও মশারি টাঙিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তারা।
মহানগরীর উপশহরের বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী শহরে আমি ২৫ বছর ধরে বাস করছি। এত মশা আমি এই শহরে আগে কখনও দেখিনি। দিনে-রাতে সব সময় মশা গান শোনাচ্ছে। পাঁচ মিনিটের জন্যও যদি ঘরের জানালা খোলা হচ্ছে, সব মশা এসে ঢুকে পড়ছে।’
রাজশাহী মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আসাম কলোনী এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্বাস আলী জানান, ‘রাজশাহী মহানগরীতে মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে বলার মত নয়। তিনি বলেন, অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথাই নাই।’
একই ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী মোতালেব ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘মশার অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশা কমার কোনো লক্ষ্মণ নেই। মশা কমবেই বা কি করে? মশা মারার কোন কার্যকরী ব্যবস্থাই তো নেই। বছরে একবার মশার ধোঁয়া দেয় কি দেয় না। এটা দেয়া হয় লোক দেখানোর জন্য মশা মারার জন্য নয়।’
মহানগরীর কাজীহাটা এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘মশার খুব অত্যাচার। বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারছে না। সারক্ষণ কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। কয়েলের ধোঁয়াতেও বাচ্চাদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক দিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে মশার অত্যাচার বেড়েছে।’
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মশা নিধনের অভিযান ঝিমিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নগরীর ভুক্তভোগী মানুষ। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর নিচতলাতে মশার উপদ্রবে রোগী ও স্বজনরা একবিন্দুও ঘুমাতে পারেন না।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ চলছে। যেসব স্থানে মশার লার্ভা তৈরি হয়, সেসব স্থানের ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেলিম শেখ নগরের কাজলা এলাকায় থাকেন। তার এলাকায় এতই মশার উৎপাত যে পড়াশোনাসহ দৈনন্দিন কোনো কাজই ঠিকভাবে করা যায় না। রাতদিন সব সময় মশারি টাঙিয়ে রাখতে হয়।
মহিষবাথানের বাসিন্দা তাইফুর রহমান বলেন, ‘আগে মশা বেড়ে গেলে কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে অভিযোগ করতাম। কিছু না হলেও স্প্রে করত। কিন্তু এখন কিছুই দেখি না। অভিযোগ করব, কিন্তু কাউন্সিলরদেরও অপসারণ করা হয়েছে। কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে শুনলাম যে একজন শিক্ষা অফিসার ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন। তাকে কোনোদিন দেখিনি যে অভিযোগ জানাব। এখন মশার অত্যাচারে ঘর-বাড়িতে থাকাটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে গেছে।’
নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার বাসিন্দা মারুফুল হক বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে মেয়র নাই, কাউন্সিলর নাই। কোনোরকম তদারকিও নাই। আসলে মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম চলছে কি না তা বুঝতে পারছি না। আমাদের এলাকায় শেষবার কবে মশক নিধন দেখেছি মনে করতে পারছি না।’
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ড্রেন পরিষ্কার করে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হচ্ছে মশার ডিম ধ্বংসের জন্য। আর ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত খুবই অল্প। তা দিয়ে সাতদিনও কার্যক্রম চালানো যাবে না। তাই এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে লার্ভিসাইড ওষুধ স্প্রে করে মশার ডিম ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রতি সাত দিন পর পর একেকটি ড্রেনে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
নগরীর নওদাপাড়া এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী জুবায়ের বলে,’ সামনেই আমাদের এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু মশার অত্যাচারে পড়তে বসাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাদিনই মশার উপস্থিতি থাকে। তবে বিকেল হতেই মশার উপদ্রব শুরু হয়। মশারি টাঙিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না। পড়ালেখা করতে হচ্ছে মশারির ভেতরে বসে। তার দাবি, অনেকেই কয়েলের ধোঁয়া সহ্য করতে পারে না। তাই কয়েলও ব্যবহার করা যায় না’।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, ‘মশা এখন বেড়েছে তা ঠিক। কারণ এখন মশার প্রজনন মৌসুম চলছে। তাছাড়া বাড়ির পাশের ঝোপঝাড় অনেকে পরিষ্কার রাখছেন না। ছাদবাগানের টবের পানি থেকেও মশা বাড়ছে। এসব ব্যাপারে নগরবাসীকে একটু সচেতন থাকতে হবে। তাহলে মশা কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে মশা তুলনামূলক কম। অন্য শহরে এখন আপনি দাঁড়াতেই পারবেন না। আমরা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মেয়র-কাউন্সিলর থাকলে তদারকিটা ভাল হয়। এখন তারা নেই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরকারি কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন। তাদের আরও অনেক কাজ থাকে। তারপরও যতটা সম্ভব আমরা সব তদারকি করছি।’
ডলার জানান, এখন লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত খুবই কম। ওষুধ কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ওষুধ এলে মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com