রাজশাহীর তানোরে ইফতারকে কেন্দ্রে করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন কর্মী খুন হওয়ার পর আবারও ইফতারে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যার পর তানোর উপজেলার রাতৈল বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারের একটি মুদি দোকানে লুটপাটের পর ভাংচুর করা হয়। দোকান মালিক বলছেন, ইফতার মাহফিলে চাঁদা না দেওয়ার কারণে তার দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। এতে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ঠিকাদার মো. রনিও। তবে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজাদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলী এই ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।
সন্ধ্যার পর মফিজ উদ্দিনের সমর্থক ও আজাদ আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আজাদ আলীর পক্ষের মো. রনি, তার ভাই মো. সজিব, গোলাম রাব্বানী, মো. শামীম, মো. জনি, রুহুল আমিন, নুরুল ইসলাম, মুদি দোকানী দুরুল হুদা ও তার ছেলে মো. মিনু আহত হন। এছাড়া মফিজ উদ্দিনের পক্ষের জিয়াবুর রহমান, আজিজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, সাহাবুর ইসলাম, মো. সুমন ও নেকশাদ আলী আহত হন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ইউনিয়ন বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. রনি বলেন, ‘এ বছরই ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নে বিএনপির দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানে একজন নিহত হন। তাই আমরা ইফতার আয়োজনের পক্ষে না। ইউনিয়ন বিএনপি এটা বয়কট করেছে। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন ইফতার করবেনই। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা তুলেছেন। এসবের আমরা অডিও রেকর্ডও পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইফতারের জন্য মুদি দোকানী দুরুলের কাছে চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। চাঁদা না দেওয়ার কারণে ইফতারের পর মফিজের লোকজন দুরুলের দোকানে হামলা করে। লুটপাট শুরু করলে আমরা গিয়ে বাধা দিই। তখন আমাদেরও মারে। এতে আমরা ৯ জন আহত হই। আমাদের মেরে দোকান থেকে প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
যোগাযোগ করা হলে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এসব গল্প কারা বানিয়ে বলে? এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএমডিএর ডিপ নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমি ঐ এলাকায় দুই বছর ধরে যাইনি। আমার কোনো লোকও মারামারিতে যায়নি।’
তবে আজাদ আলীর পক্ষের লোকজনের হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন বলে জানান মফিজ উদ্দিন। তিনি তাদের নামও জানান।
তানোর থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘সংঘর্ষে দুইপক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে কী নিয়ে সংঘর্ষ তা বলতে পারবো না। কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইফতারে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। প্রধান বক্তা ছিলেন সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোমিনুল হকের অনুসারীরা প্রধান অতিথিকে বরণ করতে চাইলে বাধা দেন বর্তমান সভাপতি মুজিবুর রহমানের অনুসারীরা। তখন দুইপক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মোমিনুল হকের ছোট ভাই গানিউল ইসলাম আহত হন। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ৩৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।