সাংবাদিকতা পেশা, যাকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। কিন্তু আজ এই দর্পণ ঝাপসা হতে চলেছে ভয় আর আতঙ্কের কালো ছায়ায়। সত্য তুলে ধরার সংকল্প নিয়ে যে সাংবাদিক কলম ধরেন, অনেক সময় সেই কলম থেমে যায় অদৃশ্য শিকলে বাঁধা পড়ে।
ভয়ের সাংবাদিকতা মানে শুধুই শারীরিক হুমকি নয়; এটি মানসিক চাপ, সামাজিক হেয়প্রতিপন্নতা, আইনি হয়রানি কিংবা প্রভাবশালী মহলের চাপিয়ে দেওয়া নীরবতা। এমনকি প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করা সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত স্থানীয় প্রভাবশালী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক শক্তির রোষানলে পড়েন।
অনেক সময় দুর্নীতি বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা অন্যান্য আইনি মারপ্যাঁচ ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চলে। আবার কখনো প্রলোভন, কখনো ভয় দেখিয়ে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।
এই ভয়ের সংস্কৃতি কেবল সাংবাদিকদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও ভয়াবহ। যখন সাংবাদিক নির্ভয়ে লিখতে পারে না, তখন সমাজের দুর্নীতি, অন্যায় আর অবিচার গোপন থেকে যায়। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ দুর্বল হয়ে পড়ে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে রাষ্ট্রের ওপর।
তবে আশার কথা, প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক সাহসী সাংবাদিক নির্ভীকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা জানেন, সত্য কখনো পরাজিত হয় না। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা বজায় রেখে সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা তাদের দায়িত্ব, এবং এই দায়িত্ব পালনে তারা আপসহীন।
ভয়ের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্য, সঠিক আইনি সহায়তা এবং জনগণের সমর্থন। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও নিশ্চিত করতে হবে স্বাধীন সাংবাদিকতার সুরক্ষা।
সত্যের পথ কখনো সহজ ছিল না, আজও নয়। কিন্তু সাহসী সাংবাদিকদের কলম চলবে, চলতেই হবে। ভয়কে জয় করেই তারা গড়বে সত্য ও ন্যায়ের জয়গাথা।
ফয়সাল আজম অপু
সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী বিভাগ