April 18, 2025, 1:17 am

রাজশাহীতে ৪ বছরের শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার :
রাজশাহীতে ৪ বছরের শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের গোয়ালদহ গ্রামে ৪ বছর বয়সী এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ইব্রাহিম হোসেন (৬৫), যিনি এলাকায় ‘সাদা বাবা’ নামে পরিচিত। ঘটনার পর থেকে প্রায় সাত মাস ধরে তিনি পলাতক রয়েছেন। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ এ ঘটনায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, বরং অভিযুক্তকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব পরিবারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির মা জানান, “২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট সকালে ঘটনাটি ঘটে। আমি মেয়েকে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে বাইরে পাঠাই। সে অভিযুক্তের নাতির সঙ্গে খেলছিল, যার বাড়ি আমাদের পাশেই। ইব্রাহিম মধু দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর তিনি নিজের নাতিদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে শিশুটিকে যৌন নিপীড়ন করেন।”

শিশুটির কান্না শুনে অভিযুক্তের নাতিরা দৌড়ে আসে। শিশুটি পরে কষ্টে বাড়ি ফিরে এসে তার মাকে ঘটনাটি জানায়। অভিযুক্তের নাতিও বিষয়টি সত্য বলে স্বীকার করে এবং জানায়, তার দাদা কিছু ‘অনুচিত’ কাজ করেছে। স্থানীয় মহিলারা শিশুটিকে পরীক্ষা করে যৌন নিপীড়নের শারীরিক চিহ্ন দেখতে পান। পরে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার দিনই পরিবার ইব্রাহিমকে ধরার চেষ্টা করে, কিন্তু সে ইতোমধ্যে পালিয়ে যায়। ২৬ আগস্ট পবা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

পরিবার অভিযোগ করে, “আমরা মামলা করেছি, কিন্তু এতদিনেও পুলিশ তাকে ধরেনি। বরং ওসি বলেছেন, আমরা যেন নিজেরা তাকে খুঁজে বের করে থানায় জানাই।”

এক প্রতিবেশী আবুল হোসেন বলেন, “প্রথমে ইব্রাহিম ঘটনাটি অস্বীকার করে বলে শিশুটিকে পিঁপড়ের কামড় হয়েছিল বলে তার প্যান্ট খুলেছিল। কিন্তু স্থানীয় মহিলারা যৌন নিপীড়নের চিহ্ন নিশ্চিত করেছেন।”

তিনি আরও জানান, ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আগেও চুরি ও প্রতারণার অভিযোগ ছিল। শিশুটির দাদা বলেন, “ইব্রাহিম অভ্যাসগত অপরাধী। সে প্রায়ই মহিলাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত।”

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুস সালাম বলেন, “আমরা সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পরিবার আইনি পদক্ষেপে অটল ছিল। এখনো চাইলে বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।”

অভিযুক্তের স্ত্রী বলেন, “ঘটনার সময় সে বাড়িতে ছিল না এবং কুরআনের শপথ করে সে নির্দোষ বলে দাবি করেছে।

ইব্রাহিমের মেয়ে অভিযোগ করেন, “ভুক্তভোগী পরিবার ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল, যা আমরা দিতে পারিনি বলেই মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে, এতদিন ধরে ইব্রাহিম নিখোঁজ থাকলেও তার পরিবারের কেউ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেনি। পুলিশ বলছে, তার নিখোঁজ থাকাই মামলার অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পবা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে রাগান্বিত হয়ে বলেন, “আপনারা কি আইন জানেন? আগে আইন শিখে তারপর আমাদের প্রশ্ন করতে আসবেন। আমরা এখনও মেডিকেল রিপোর্ট পাইনি, তাই মামলাটি বিলম্বিত হচ্ছে।”

তবে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-ইন্সপেক্টর এমএস রায়হানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা নভেম্বরেই রিপোর্ট পেয়েছেন। তবে তার পূর্বে আর একজন এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন এবং তার তদন্তের কাজ চলমান আছে।

পরে পবা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুল ইসলাম ভোল পাল্টে বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেছি। কিন্তু এখনো তার কোনো সন্ধান পাইনি। যদি নিখোঁজ থাকেই, তবে মামলাটি আদালতে স্থানান্তর করা হবে। আমরা অতি দ্রুত চার্জশিট প্রদান করবো।”

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এটা নিয়ে আপনাদের অতিরঞ্জিত কিছু করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া বাদী পক্ষ যদি আসামিকে খুঁজে দেয়, তাহলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে আসবে।

ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, “আমরা আমাদের শিশুর জন্য ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছে না, বরং বলছে আমরাই অভিযুক্তকে খুঁজে বের করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com