গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সম্প্রতি সুপারিশ করেছে, একই কোম্পানি একাধিক মিডিয়ার মালিক হতে পারবে না। এই সুপারিশের পেছনে যুক্তি হলো, মিডিয়ার মালিকানা সীমিত করা গেলে সংবাদপত্র ও সম্প্রচার মাধ্যমের বৈচিত্র্য নিশ্চিত হবে। গণতান্ত্রিক পরিসরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখতে এটি জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই সুপারিশ কি বাস্তবায়নযোগ্য?
কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন যমুনা টিভির ফাহিম ভাই। যমুনা গ্রুপেরই আরেক মিডিয়া যুগান্তর। এখন প্রশ্ন হলো, এই সুপারিশ কার্যকর হলে যমুনা গ্রুপ কি তাদের কোনো একটি মাধ্যম বন্ধ করতে রাজি হবে? অথবা, যুগান্তর ও যমুনা টিভিকে একীভূত করে একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা কি বাস্তবে সম্ভব?
কমিশনের প্রধান ছিলেন প্রথম আলোর কামাল ভাই। তাঁর মালিকানাধীন ট্রান্সকম গ্রুপ বর্তমানে তিনটি মিডিয়া পরিচালনা করে—প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, এবং এবিসি রেডিও। তাহলে কি কামাল ভাই নিজেই তার প্রতিষ্ঠানকে এই সংস্কারের আওতায় আনতে রাজি হবেন? প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার মিলে একটি হয়ে যাওয়া কি কেউ কল্পনা করতে পারে?
অন্যদিকে, মালিকদের সংগঠন নোয়াবের প্রতিনিধি ছিলেন আখতার হোসেন। এই সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা হামিম গ্রুপের এ কে আজাদ। তাঁর মালিকানায় রয়েছে সমকাল এবং চ্যানেল ২৪। এখন প্রশ্ন হলো, আজাদ সাহেব কি স্বেচ্ছায় এই দুই মিডিয়ার মধ্যে যেকোনো একটি বন্ধ করে দিতে রাজি হবেন? কিংবা একত্রিত করে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন?
সংস্কার তখনই কার্যকর হয়, যখন তা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয়। কিন্তু এই সুপারিশ কার্যকর হলে যাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের ওপর সেটি কতটা প্রভাব ফেলবে? স্বার্থের সংঘাত কি এখানে স্পষ্ট নয়?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বৈচিত্র্য প্রয়োজন, কিন্তু তার জন্য মালিকানা একীভূত করা কি সঠিক পথ? বরং গণমাধ্যমের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রদান করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখা—এই বিষয়গুলোই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
শেষ পর্যন্ত, এই সংস্কারের উদ্দেশ্য যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়, তাহলে তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যদি এটি কোনো পক্ষের স্বার্থ রক্ষা বা প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হয়, তাহলে এ নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
গণমাধ্যম সংস্কার হবে, তবে তা হতে হবে সব পক্ষের অংশগ্রহণ এবং স্বচ্ছ আলোচনার মাধ্যমে। নইলে এই সংস্কার সংস্কার খেলা চলতেই থাকবে।