রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার নির্ভরতার নাম পদ্মা নদী। এই নদী অববাহিকার সাথে ঘনিষ্ঠ মানুষের কৃষি, সংস্কৃতি, সমাজ ও অর্থনীতির সংযোগ ও সম্পৃক্তির ইতিহাস অনেক পুরান। কিন্তু ভূ- রাজনৈতিক স্বার্থ-সম্পর্কের নিষ্ঠুর ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পদ্মা নদী জীর্ণ-শীর্ণ নদীতে পরিণত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে স্রোতস্বিনী গতি হারিয়ে ক্ষয়িষ্ণু-দুর্বল হয়েছে।
এক সময় পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন অসংখ্য জেলে। চার দশক আগেও দূর থেকে শোনা প্রমত্তা পদ্মার গর্জন বর্ষীয়ানদেও স্মৃতিতে জ¦াজ্যল্যমান। পদ্মা অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য। পদ্মার সেই যৌবন আর নেই। হারিয়েছে চিরচেনা রূপ ও জৌলুস। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় আয়তন কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। কমেছে গভীরতাও। প্রমত্তা পদ্মা এখন বর্ষার সময়টুকু বাদ দিলে শুধুই বালুচর।
পদ্মার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ। আবাসস্থল হারিয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। একই সাথে প্রতিবছর নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিজমিতে সেচ এবং খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ‘বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড কনজারভেশন’ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ১৯৮৪ সালের তুলনায় শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীর আয়তন কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। পানির গভীরতা কমেছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি প্রবাহ কমেছে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে মিঠা পানির সরবরাহ কমেছে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া পদ্মা অববাহিকায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৯ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। অববাহিকায় বেড়েছে তাপমাত্রা। ১৯৮১ সালে রাজশাহী অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৯ সালে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি।
রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১২৫ ফুট নিচে অবস্থান করছে। গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। রাজশাহী এবং এর পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র এলাকায় শীতেই পানি শূন্যতায় চৌচির হয়ে পড়েছে খাল, বিল এবং পুকুর। খাওয়ার পানির অভাব তিব্র হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে চারঘাটের সরদহ পর্যন্ত পদ্মার ৭০ কিলোমিটার অংশ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ওই এলাকার নয়টি পয়েন্টে মৎস্য প্রজাতির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পদ্মা পারের ২৭টি জেলেপল্লি থেকে নেওয়া হয় জীবন-জীবিকার তথ্য। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে পদ্মার বর্তমান চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করা হয়।