April 18, 2025, 1:35 am

বিদেশি মুরগি পালনে পুঠিয়ার শাহাবুদ্দিনের সফলতা

পুঠিয়া প্রতিনিধি :
বিদেশি মুরগি পালনে পুঠিয়ার শাহাবুদ্দিনের সফলতা

লাল, সাদা আর বাহারি রঙের পালকে ঢাকা মুরগিগুলোর শরীর। দেখলে মনে হবে, এ যেন চিত্রশিল্পীর আলপনা আঁকা। কোনোটার মাথা দেখতে সিংহের কেশরের মতো, আবার কোনটা সাদা কদম ফুল। এমন বিদেশি নানা জাতের মুরগি পালনে সফলতার মুখ দেখেছেন পুঠিয়ার জামিরা গ্রামের শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যক্তি।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়নের কিসমোত জামিরা গ্রামের আব্দুল করিম ছোট ছেলে অন্তর শাহাবুদ্দিন (৫০)। ২০১৭ সালে তিনি ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি শেষ করে নিজ বাড়িতে আসেন। বাসায় বসে ইউটিউবে পাকিস্তানি ও ‘ফেসবুকে বিভিন্ন দেশের ভিডিও দেখে ও পশুপাখির গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর বিদেশি জাতের মুরগি পালনের শখ জাগে। মুরগি পালন দেখে নিজেও উদ্বুদ্ধ হয়ে সাবলম্বী হবার আশায় নিজের জমানো টাকায় প্রথমে ৩০০টাকা পিচ হিসেবে মাত্র ৬০ পিচ তারকি জাতিক মুরগি কিনে পালন শুরু করেন। এরপর মুরগির বাচ্চা ফুটিয়ে নিজের হাতে ভ্যাকসিন-সহ সব উপকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে বাচ্চা বড় করতে থাকেন। সেই মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। সেই মুরগির টাকায় নানা জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে থাকেন।

 

‘প্রথম প্রথম মুরগি পালনে বিরক্ত হতো। এখন খারাপ আড্ডা না দিয়ে মুরগি পালনে সময় দেয়। এ থেকে ওর নিজের হাত খরচের টাকা আয় করছে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে সেই টাকায় গড়ে তোলেন এক বিদেশি মুরগির খামার। শাহাবুদ্দিনের খামারে যে মুরগি রয়েছে তা ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই মুরগির ডিম হ্যাচিং করে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করেন। খামারের ভিত্তরে অন্য কোন মানুষকে প্রবেশ করতে দেন না। তার খামারে কাজ করার জন্য তিনজন কর্মচারি আছেন, তাদের মাস শেষে ৪০হাজার টাকা বেতন দিতে হয়।

 

বর্তমানে তার খামারে কলোম্বিয়ান ব্রাহামা, ইউরোপিয়ান সিল্কি, উইন্ডোট, কলোম্বিয়ান লাইট ব্রাহ্মা, গোল্ডেন স্রেফ ব্রাইট, কোচিন, ফিজেন্ট, ফাউমি-সহ প্রজাতির মুরগি আছে। মুরগিগুলোর মধ্যে এক এক পিচের দাম ৭০০-৮০০ শত টাকা পর্যন্ত। তার এ মুরগির ডিম থেকে বাচ্চাগুলো ফুটলে অনলাইনে (সোলাল মিডিয়া) চাহিদানুযায়ী চলে যায় দেশের রাজশাহী, ঢাকা, দিনাজপুর, শেরপুর, ফরিদপুর-সহ বিভিন্ন জেলায়। মুরগি বিক্রির টাকায় চলছে তার পুরো সংসার ও হাতখরচ। মুরগির ডিম বিক্রয়ের পাশাপাশি মা-বাবাসহ প্রতিবেশীদেরকে মাঝেমধ্যে উপহার দিয়ে থাকেন। এতে খুশি তার পরিবার। পাশাপাশি প্রতিবেশীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নানা জাতের মুরগি পালনে। বিভিন্ন জাতের বিদেশি মুরগির খামারের পাশাপাশি ৪টা দুম্বার খামার, ১৫টি বিভিন্ন জাতের গরু নিয়ে ডেরি ফার্ম গড়ে তুলেছেন।

 

শাহাবুদ্দিনের বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘প্রথম প্রথম ছেলের মুরগি পালনে বিরক্ত হতাম। এখন খারাপ আড্ডা না দিয়ে মুরগি পালনে সময় দেয়। এ থেকে ওর নিজের হাতখরচের টাকা আয় করছে। কিছু একটা করে নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছে, এটা খারাপ কিছু না।’

শাহাবুদ্দিন বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি শেষ করে নিজ বাড়িতে আসি। বাসায় বসে ‘ফেসবুক ও ইউটিউবে পাকিস্তানি বিভিন্ন দেশের ভিডিও দেখে বিদেশি জাতের মুরগি পালনের শখ জাগে। পরে কিছু জমানো টাকা আর সংসার থেকে কিছু নিয়ে প্রথমে ৩০০টাকা পিচ হিসেবে মাত্র ৬০ পিচ তারকি জাতিক মুরগি কিনে পালন শুরু করি। সেই মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি শুরু করি। সেই মুরগির টাকায় নানা জাতের মুরগি সংগ্রহ করি। এ মুরগির ডিম থেকে বাচ্চাগুলো ফুটলে অনলাইনে (সোলাল মিডিয়া) চাহিদানুযায়ী ক্রেতাদের কাছে পৌছে দিয়। মুরগির খামারের পাশাপাশি ৪টা দুম্বার খামার, ১৫টি বিভিন্ন জাতের গরু নিয়ে ডেরি ফার্ম গড়ে তুলেছি। সরকারি সহায্য-সহযোগিতা পেলে আমি আরো বড়সড়ো করে বিভিন্ন ধরণের খামার দাড় করাতে পারবো। খামারে মুরগি, গরুর কোন সমস্যা হলে পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফোন করলে, তারা দ্রুত এসে ও ফোনে সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষিত বেকাররা বিদেশি মুরগি পালন করলে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তিনি আধুনিকভাবেই মুরগিগুলো লালন পালন করছেন বলে দাবি করছেন।

 

পুঠিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিতো এখানে নতুন এসেছি এবিষয়ে এখনো কিছু জানিনা। আমি অফিসিয়াল কাজের মিটিং এর জন্য ঢাকায় যাচ্ছি এসে খোজ খবর নেব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com