রাজশাহীতে রোজার শুরু থেকেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি সংকটে পড়েছেন, কারণ স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধাপে ধাপে রোজার আগ থেকে চালের দাম বেড়েছে এবং এখনো ঊর্ধ্বমুখী।
গত দুই মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাসমতি চাল ৯২ টাকার স্থলে ৯৫ টাকা, আঠাশ চাল ৬৫ টাকার পরিবর্তে ৭২ টাকা এবং স্বর্ণা চাল ৫৫ টাকার বদলে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, চিনিগুঁড়া আতপ ১২৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা এবং কাটারি আতপ ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। তবে জিরাশাইল ও গুটিস্বর্ণ চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা মিল মালিকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন, আবার মিল মালিকরা ধানের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। মেসার্স সুশীল চাল ভাণ্ডারের বিক্রেতা মো. রাজু আহমেদ জানান, এক মাস আগেও ৫০ কেজির আটাশ চালের বস্তা ৩,০০০ থেকে ৩,২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩,৪০০ থেকে ৩,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম রোজার মধ্যে বাড়েনি, রোজার আগ থেকেই চালের দাম ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভাই ভাই রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মামুন হোসেন বলেন, মিল মালিকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়ার ফলে আমরা কম দামে বিক্রি করতে পারছি না।
টিকা পাড়ার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন রোজার বাজার করতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক সপ্তাহ আগে ৬৫ টাকায় কিনেছি যে চাল, আজ দোকানদার সেটার দাম ৭০ টাকা চাইছে। ছয় মাস আগে তো এটা ৫৫ টাকা ছিল!
সাহেব বাজারে বাজার করতে আসা স্কুলশিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, যেভাবে চালের দাম লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে কেজি ১০০ টাকায় পৌঁছতে খুব বেশি সময় লাগবে না।তিনি ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবং সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, সরকারের উচিত চালের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী সবগুলো ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।
রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিপুল বিশ্বাস বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি। কোথাও মজুদদারি বা সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বাজারের দাম নির্ধারণ করা আমাদের দায়িত্ব নয়।
রোজার বাজারের এই অস্থিরতা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের জন্য চরম সংকট তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীদের একে অপরের ওপর দোষ চাপানো এবং প্রশাসনের সীমিত পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে, যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে।