February 11, 2025, 2:34 am

পাঁচ বছরে ই-সিগারেটের দোকান বেড়েছে ৭৮ শতাংশ

স্বাস্থ্য ডেস্ক :
পাঁচ বছরে ই-সিগারেটের দোকান বেড়েছে ৭৮ শতাংশ

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে উঠে পড়ে লেগেছে তামাক কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আসক্ত করতে তারা বিভিন্ন কূটকৌশল প্রয়োগ করে দেশে ই-সিগারেটের বাজার দ্রুত সম্প্রসারণ করছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, পাঁচ বছরে ই-সিগারেটের দোকান বেড়েছে ৭৮ শতাংশ।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্ক-আইপিএন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে নতুন পণ্য বিস্তারে তামাক শিল্পের কূটকৌশল’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব তথ্য জানানো হয়।

জানা গেছে, তামাক বিষয়ক এই গবেষণাটি যৌথভাবে সম্পাদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মী এহসানুল হক জসীম এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সৈয়দ সাইফুল আলম। ছয় মাসব্যাপী মাঠ পর্যায়ের এই গবেষণাটি পরিচালিত হয় ২০২২ সালে।

ফলাফল উপস্থাপনে বলা হয়, ২০১২ সালে বাংলাদেশে প্রথম ই-সিগারেট আগমনের পর প্রথম ৪/৫ বছর পর্যন্ত কেবলই রাজধানীর কিছু অভিজাত এলাকায় ই-সিগারেটের অল্প কিছু দোকান ছিল। ই-স্মোকারের সংখ্যাও তখন খুবই কম ছিল। এখন সারাদেশে ই-সিগারেট পাওয়া যায়। জ্যামিতিক হারে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ই-স্মোকারের সংখ্যা ও ই-সিগারেটের ব্যবহার।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চালু হয়েছে এবং এখনো ই-সিগারেট বিক্রি করছে, এমন দোকানের সংখ্যা ২২ শতাংশ। বাকি ৭৮ শতাংশ ই-সিগারেটের দোকান ২০১৬ সালের পর (২০১৭-২০২১) পাঁচ বছরের মধ্যে চালু হয়। মাত্র পাঁচ বছরে কয়েকগুণ ভ্যাপিং শপ বৃদ্ধি পেলেও পুরাতন দোকানগুলোর বিক্রি কমেনি। বরং নতুন ও পুরাতন দোকানগুলোতে দিন দিন বিক্রি বাড়ছে।

গবেষণায় বলা হয়, মাত্র কয়েক বছরে বেশির ভাগ ই-সিগারেটের দোকান চালু হওয়ার বিষয়টি দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ই-সিগারেট খুবই দ্রুত ও আশঙ্কাজনক হারে বিস্তারের প্রমাণ। তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন কূটকৌশলের কারণে দেশে ই-সিগারেটের ব্যবহার ও নতুন এই তামাক পণ্যের বাজার জ্যামিতিক হারে বিস্তৃত হচ্ছে।

আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে এই গবেষণায়। ই-সিগারেটের বাজার সম্প্রসারণ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) অধীনে একটি পৃথক বিভাগ গঠনেরও সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলোর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন তামাক-বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন মানসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বারডেমের ডেন্টাল বিভাগের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দীন ফারুক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমদ। ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম মাওলার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান ও বিএনপিটিপির হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।

গবেষণা ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকোসহ (বিএটি) বিভিন্ন বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বাংলাদেশ ই-সিগারেট বিস্তারে কাজ করছে। জনসংখ্যার অনুপাতে গত কয়েক বছরে দেশে প্রচলিত ধূমপায়ীর হার কমেছে। কিন্তু বহুজাতিক বিভিন্ন তামাক কোম্পানির কৌশল এবং প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ই-সিগারেট এখন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশ বিক্রেতা জানিয়েছেন, ই-সিগারেট ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তারা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক সাইট উভয়ই ব্যবহার করেন। ৯৪ শতাংশ দোকান সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। তারা অফ-লাইন মিডিয়াও ব্যবহার করে। তরুণদের ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করতে দেশে প্রথমবারের মতো একটি ভ্যাপিং উৎসবেরও আয়োজন করা হয়।

বহুজাতিক তামাক কোম্পানির বিভিন্ন ব্রান্ডের ভ্যাপিং পণ্য বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় শীর্ষস্থানীয় কোনো কোনো তামাক কোম্পানির সরাসরি তত্ত্বাবধানে ই-সিগারেটের দোকান পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকায় অন্তত ৩৯টি আউটলেটের সন্ধান পাওয়া যায় যেখান থেকে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি পর্দার অন্তরাল থেকে ই-সিগারেট বিক্রি করছে।

বিগত ২২ বছরের ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে অনেক বহুজাতিক তামাক কোম্পানি নীরবে অনেক ই-সিগারেট ব্রান্ড ও ই-সিগারেটের সম্পৃক্ত অন্যান্য অনেক পণ্যের ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নিয়ে রেখেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার মাধ্যমে ই-সিগারেট আমদানি করা যেমন এই তামাক পণ্য বাংলাদেশে বৈধকরণের কূটকৗশলের অংশ, তেমনি ট্রেডমার্ক নিবন্ধন বৈধকরণের আরেকটি কূটকৗশল।

বাংলাদেশে ই-সিগারেটের বাজার সম্প্রসারণ এবং এর ব্যবহারকারী বাড়াতে আইনের ফাঁক ফোকর কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলোও ধূমপান জোনের সদ্ব্যবহার করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ