রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় দিন-দুপুরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় অস্ত্রসহ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে নৌ পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ মে) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পদ্মার মাঝ নদীতে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর কলে খবর পেয়ে নৌ পুলিশের বেশ কয়েকটি থানা ও ফাঁড়ির সদস্যদের সম্মিলিত অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— ডাকাত মহসিন সরকার (৩০), তাজুল ইসলাম (৩০), সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা (৩০), শাহিন বেপারী (৩৫), মো. মেহেদী (২৫), মো. সিহাব (২২) ও এবাদুল বেপারী (৪০)। এসময় তাদের কাছ থেকে গরু ব্যবসায়ীদের ছিনতাই করা ৩৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত স্পিডবোট, চারটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড গুলি, কাটার, ছেনি ও নয়টি মোবাইল ফোন।
বুধবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর গুলশান-১ এ নৌ পুলিশের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী আরিচা গরুর হাটে গরু বিক্রি শেষে সেখান থেকে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরি ঘাটের সামনে আসেন। এর পরপরই স্পিডবোটে করে আসা ২০-২২ জনের ডাকাত দল দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ব্যবসায়ীদের মারধর করে। এরপর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু বিক্রির টাকা ছিনিয়ে নেয়।
৯৯৯ এর মাধ্যমে এমন তথ্য জানতে পেরে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা অভিযানে নামেন। পাশাপাশি নৌ পুলিশের সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর অঞ্চলের বিভিন্ন নৌ থানা ও ফাঁড়িকে বিষয়টি জানানো হয়।
নৌ পুলিশ সদস্যরা ডাকাত দলের ব্যবহৃত স্পিডের পিছু নেন ও ধাওয়া দিলে তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ডাকাতরা মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার ডহুরীর খাল দিয়ে দিঘীরপাড় হয়ে মেঘনা নদীতে প্রবেশ করে। তখন মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ি ও চর আব্দুল্লাহপুর নৌ পুলিশ সম্মিলিতভাবে ডাকাতদের পিছু নেয়।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ডাকাত দল গন্তব্য-রুট পরিবর্তন করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার বাঘাইকান্দি গ্রামের খালে ঢুকতে ঢুকতে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এসময় পুলিশও ডাকাতদের লক্ষ্য করে পাল্টা ১৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
একপর্যায়ে নৌ পুলিশের চতুর্মুখী আক্রমণে টিকতে না পেরে ডাকাতদল মুন্সীগঞ্জ সদর থানার বাঘাইকান্দি গ্রামের খালের পাড়ে স্পিডবোট রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে গ্রামবাসী ও জেলা পুলিশের সহায়তায় ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা এর আগেও বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা জামিনে বের হয়ে একই কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ডাকাতিতে জড়িত বাকি ১৩ জনের নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে নৌ পুলিশ প্রধান বলেন, গত বছরের আগস্টে এমন এক ঘটনায় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ অভিযানে নৌপথ অনেক নিরাপদ। অনেক দিন পর এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।