February 11, 2025, 2:57 am

জাপানে নৌশক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

সংবাদ ২৪ঘন্টা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
জাপানে নৌশক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান সাগরে যৌথ শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে যাচ্ছে। পারস্পরিক সমঝোতা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র মিত্র দেশ জাপানের ভূখণ্ডে আরো ক্ষমতাসম্পন্ন নৌশক্তির পরিধি বাড়াবে বলে জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটন সূত্রে বুধবার এই কথা জানা যায়।

কয়েক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় মিত্র জাপান তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সামরিক ব্যয়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করে। ওই সময় টোকিও দাবি করে, চীন ও উত্তর কোরিয়ার সৃষ্ট আঞ্চলিক হুমকি বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই তাদের এই মহাপরিকল্পনা। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশের পর জাপান তার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ওয়াশিংটনে পাঠায়।

দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকের পর জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর এই নতুন পরিকল্পনা সামনে এলো।
বুধবার প্রকাশিত বিবৃতিতে ‘ক্রমবর্ধমানভাবে মারাÍক হওয়া নিরাপত্তা পরিবেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জোটের আধুনিকায়নের’ অঙ্গীকারের কথা বলা হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াসি ইয়োশিমাসা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামাদা ইয়াসুকাজুর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, জাপানে বিদ্যমান ‘১২তম মেরিট রেজিমেন্ট’ পুনর্গঠন করে ‘১২তম মেরিন লিটোরাল রেজিমেন্টে’ রূপ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, নতুন এই নৌ ইউনিট হবে আরো ক্ষিপ্র, আরো সক্ষম এবং আরো ভয়ংকর।

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত মেরিন লিটোরাল রেজিমেন্টটি আকাশ ও সমুদ্রে সমান প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। বিশেষ করে তাইওয়ানের কাছে জাপানি দ্বীপ ওকিনাওয়ায় এই ইউনিট মোতায়েন করা হবে, যেখানে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন আরো জানান, পুনর্গঠিত ইউনিটটি ২০২৫ সাল নাগাদ মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, জাপানের প্রতিরক্ষার পাশাপাশি মুক্ত ও অবাধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সমুন্নত রাখতে আমাদের বড় প্রচেষ্টায় এটি অবদান রাখতে যাচ্ছে।’

লয়েড অস্টিন চীনা আধিপত্যহীন এশিয়ার প্রতি ইঙ্গিত দেন। চীনের সঙ্গে জাপানের সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এটি চীনের কাছে দিয়াউ নামে পরিচিত। মূল ভূখণ্ডসহ দ্বীপটি রক্ষায় জাপানের পাশে থাকার কথা জানান মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে চীনের দ্রুত উন্নতির প্রেক্ষাপটে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, মহাকাশ থেকে মহাকাশে আক্রমণের ব্যাপারগুলো জোটের নিরাপত্তা বিষয়ে স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা চুক্তির পঞ্চম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এক দেশের ওপর আক্রমণ উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মৈত্রীর নতুন এ তৎপরতা সম্পর্কে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সামরিক সহযোগিতার সময় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নিশ্চিত করা উচিত যে, তারা যেন তৃতীয় পক্ষের কিংবা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষতি না করে।’

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নের বিশাল পরিকল্পনা সামনে এনেছে। সেখানে মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন টোকিও এই ‘প্রতি-আক্রমণ সক্ষমতা অর্জনের’ আকাক্সক্ষার প্রশংসা করেছে। এরপর সামরিক সহযোগিতার নতুন এ সমুদ্রভিত্তিক পরিকল্পনা সামনে এলো।

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এই প্রতিরক্ষা সংলাপে তাইওয়ানের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, তাইওয়ান প্রণালিতে চীন ‘উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক’ আচরণ করছে। তবে লয়েড অস্টিন তাইওয়ানের ওপর চীনের আসন্ন হামলার কোনো আশঙ্কা প্রকাশ করেননি।

সূত্র : সিএনএন, এএফপি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ