February 6, 2025, 2:04 pm

খোঁজ নেই গণপূর্তের প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের

ঢাকা অফিস :
খোঁজ নেই গণপূর্তের প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেল-৩-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিনের খোঁজ নেই। ছুটি না নিয়ে এবং ঊর্ধ্বতনদের না জানিয়ে কর্মস্থলে নেই বেশ কিছুদিন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সহকর্মীরা বলছেন, তিনি দ্বৈত পাসপোর্টধারী এবং বিদেশে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বিভাগীয় একটি মামলা রয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেল-৩-এর অধীন। ফলে এই সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর চেয়ারটি গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি রোকন উদ্দিন ওই দায়িত্ব পান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ছুটি বা কোনো ধরনের দাপ্তরিক নোটিশ ছাড়াই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন বেশ কিছুদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি এই কর্মকর্তার আট বছর ধরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট রয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টে তাঁর নাম মো. রোকন উদ্দিন, যার নম্বর ‘ওসি ৪১৫৭১৪৮’ এবং অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টে নাম মুন্সি রোকন উদ্দিন, নম্বর ‘এন ৮৩৭০২৭৬’। তাঁর স্ত্রী-সন্তান কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তবে তিনি এখন সেখানে আছেন কি না, তা সহকর্মীরা নিশ্চিত নন। এই দুই পাসপোর্ট ব্যবহার করে গত আট বছরে বেশ কয়েকবার তিনি বিদেশ গেছেন। কখনো সরকারের অনুমতি নিয়ে, আবার কখনো বিনা অনুমতিতে। এসব বিদেশ ভ্রমণে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে কি না, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা খতিয়ে দেখছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা মেট্রোপলিটন জোন) মো. নাসিম খান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন বেশ কিছুদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাঁকে না পেয়ে ১৭ এপ্রিল বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের একসঙ্গে দুটি দেশের পাসপোর্ট ব্যবহারের লিখিত অভিযোগটি করেন তাঁর স্ত্রী। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তদন্ত শুরু করে মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আ ন ম নাজিম উদ্দিন বলেন, নামের কিছু পরিবর্তন করে এই প্রকৌশলীর একসঙ্গে দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার নিয়ে তাঁর স্ত্রীর করা অভিযোগের তদন্ত চলছে। অভিযোগের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো জবাব আসেনি। জবাব না এলেও দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র বলেছে, সংসদ ভবন ছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩-এর। রোকন উদ্দিন এই সার্কেলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর শ্যালকের মালিকানাধীন মমতা ট্রেডার্স ও ছোট ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান মুন্সি ট্রেডার্স শেরেবাংলা নগরে একটি ১৮ কোটি, একটি প্যাকেজে ৫ কোটি ও অন্য একটি প্যাকেজে ৮ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করে। বছর দুয়েক আগে তিনি নিজ কর্মস্থলের এক নারী উপসহকারী প্রকৌশলীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ঠিকাদারি নিয়ে তাঁর শ্যালকের সঙ্গে ওই নারী প্রকৌশলীর ঝামেলা হলে সম্পর্কের বিষয়টি অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী স্ত্রীর কানে যায়। স্ত্রী দেশে এসে রোকনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর স্ত্রী ও শ্যালক একপর্যায়ে গণপূর্তসচিব ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, যেখানে রোকনের দুই দেশের পাসপোর্টের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে রোকন উদ্দিনের দুটি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার ফোন ধরেননি। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সংস্থাপন) মো. শহিদুল আলম ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ