February 11, 2025, 2:48 am

অবরোধে বন্ধ যান চলাচল, হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষজন

ঢাকা অফিস:
অবরোধে বন্ধ যান চলাচল, হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষজন

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মহাখালী-গুলশান লিংক রোড বন্ধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। তৈরি হয়েছে জনভোগান্তি। বিশেষ করে অসুস্থ এবং নারীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হয়ে মাঝ রাস্তায় আটকে গিয়ে বাধ্য হয়েই হাঁটতে হচ্ছে তাদের। এসময় অনেকেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ২০ মিনিটে সড়ক অবরোধ করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা ১১টা থেকে মহাখালী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তেমন শিক্ষার্থী সকাল থেকে উপস্থিত ছিল না। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আর মহাখালী-গুলশান লিংক রোডের উভয় পাশই বাঁশ দিয়ে আটকে রাখতে দেখা গেছে। এতে রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকদের বাগবিতণ্ডায় জড়াতেও দেখা গেছে। এমন অবস্থায় এই সড়ক ব্যবহার করে চলাচলকারীরা হেঁটেই গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন। তবে গাড়ি বন্ধ থাকায় বেশি অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন অসুস্থ ও নারীরা।

dhakapostমহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পায়ে হেঁটে মহাখালী যাচ্ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন। আর সঙ্গে থাকা তার স্ত্রীর একহাতে ব্যাগ এবং অন্য হাতে অসুস্থ স্বামীকে ধরে রাখতে দেখা যায়।

অসুস্থ জয়নাল বলেন, খুবই কষ্ট হচ্ছে। ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম। বের হয়ে দেখি কোনো রিকশা বা গাড়ি নেই। আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম। সেজন্য মহাখালী বাস কাউন্টারে যাব। কোনো গাড়ি বা রিকশা না পেয়ে পায়ে হেঁটেই সেখানে যাচ্ছি।

রবিউল ইসলাম নামের আরেক পথচারী বলেন, কোনো কিছু হলেই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। মানুষজনের কষ্ট হচ্ছে অনেক। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কী লাভ? দ্রুত এই বিষয়ে একটি সমাধান হওয়া উচিত।

dhakapostঅন্যদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নূর মোহাম্মদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। সরকার এবং প্রশাসন আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করেছে। একদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে অন্যদিকে আবার নাকচ করে দিয়েছেন। আমাদের অনেকগুলো শিক্ষার্থী ৬ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন। এগুলোর দাম সরকারের কাছে নেই।

প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সবশেষ গতকাল রাতে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। দাবিগুলো হচ্ছে —

১. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।

২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করে যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।

৩. তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ সৃষ্টি করার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টির দায়ভার মাথায় নিয়ে আইন উপদেষ্টাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেজ